ঈদ-এ মিলাদুন্নবী উদযাপন : একটি পর্যালোচনা
মুহাম্মদ রবিউল আলম

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার শুভাগমনের দিন কেবল মুসলমান নয় সৃষ্টিজগতের সকলের জন্য আনন্দের ও রহমতের। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন- আমি আপনাকে জগতসমূহের রহমত করে প্রেরণ করেছি। তাই সৃষ্টির সূচনা কাল থেকে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামা উদযাপিত হয়ে আসছে। যেহেতু ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলো মুসলিম জাতির আনন্দের দিন, সেহেতু সারা বিশ্বের মুসলিমগণ অত্যন্ত ভক্তি ও মর্যাদার সাথে রবিউল আউয়াল মাসে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন করে থাকেন। কিন্তু এক দল লোক এটিকে অবৈধ ও বিদয়াতে সাইয়্যিআহ (মন্দ বিদআত) বলে প্রচার করছে। অথচ এটি একটি শরিয়ত সম্মত পুণ্যময় আমল, যা কুরআন, সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। অত্র প্রবন্ধে আমরা এটি শরিয়ত সম্মত হবার বিষয়ে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের দলীল, সাহাবায়ে কিরামের স্বীকৃতি, সালফে সালেহীন, প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফিকাহবিদগণের দৃষ্টিভঙ্গি তোলে ধরার প্রয়াস পেয়েছি।

১. ঈদে মিলাদুন্নবী পরিচিতি
ক.শাব্দিক পরিচয়
‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ শব্দটি যৌগিক শব্দ। যা তিনটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। এক, ঈদ দুই, মিলাদ তিন, নবী। প্রথমত: ঈদ শব্দটি আরবি। এর শাব্দিক অর্থ উৎসব, আনন্দ, খুশি। বিশ্ববিখ্যাত অভিধান প্রণেতা ইবনু মনযুর বলেন- العيد كل يوم فيه جمع অর্থাৎ ‘সমবেত হবার প্রত্যেকদিনকে ঈদ’ বলা হয়। মুফতি আমীমূল ইহসান আলাইহির রাহমাহ বলেন-العيد كل يوم فيه جمع او تذكار لذي فضل অর্থাৎ কোন মর্যদাবান ব্যক্তিকে স্মরণের দিন বা সমবেত হবার দিনকে ঈদের দিন বলা হয়।
দ্বিতীয়ত: মিলাদ শব্দটি আরবি। এর শাব্দিক অর্থ: জন্মকাল, জন্মদিন। এ অর্থে মাওলিদ (مولد) শব্দের ব্যবহার আরবি ভাষায় অত্যোধিক।
তৃতীয়ত: নবী, এখানে নবী বলতে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বুঝানো হয়েছে। কারণ মুসলিম জাতি ও পুরো সৃষ্টিজগত তাঁর আগমণের শোকরিয়া আদায় করে।
সুতরাং ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ অর্থ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র শুভাগমনের আনন্দ উৎসব।

খ.‘মিলাদুন্নবী’ শব্দের প্রচলন
‘মিলাদুন্নবী’ শব্দের মধ্যে ‘মিলাদ’ শব্দটি কারো জন্ম বা জন্মকাল বুঝানোর জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। এ অর্থে শব্দটির ব্যবহার রয়েছে হাদিস শরিফে, অভিধান গ্রন্থে, ইতিহাস গ্রন্থে, এমনকি অনেক কিতাবের নামেও। এটি নতুন কোন শব্দ নয়। এর কয়েকটি ব্যবহার নিম্নে উল্লেখ করা হল।

১.অভিধান গ্রন্থ
আল্লামা ইবনু মনযুর তার সুপ্রসিদ্ধ আরবি অভিধান ‘লিসানুল আরব’- এ লিখেছেন- ميلاد الرجل : اسم الوقت الذي ولد فيه অর্থাৎ- ‘লোকটির মিলাদ- যে সময়ে সে জন্ম গ্রহণ করেছে সে সময়ের নাম।

২.হাদিস গ্রন্থ
ইমাম তিরমিযী আলাইহির রাহমাহ তাঁর ‘আল জামেউস সহীহ’ গ্রন্থের একটি শিরোনাম হল- باب ما جاء في ميلاد النبي অর্থাৎ- ‘নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র জন্ম সম্পর্কে বর্ণিত বিষয়ের অধ্যায়।’
হযরত উসমান বিন আফ্ফান রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বনী ইয়ামর বিন লাইসের ভাই কুরাছ বিন উশাইমকে জিজ্ঞেস করলেন-
أانت أكبر أم رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: رسول الله أكبر مني وأنا اقدم منه في الميلاد
অর্থাৎ- ‘আপনি বড় নাকি রাসুলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার চেয়ে বড়। আর আমি জন্মের মধ্যে তার চেয়ে অগ্রজ।’

৩. ইতিহাস ও সীরাত গ্রন্থ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরতের সময় ‘সাওর’ গুহায় আশ্রয় নেন। এদিকে মক্কার কুরাইশরা তাকে খুঁজতে খুঁজতে ‘সাওর’ গুহা মুখে পৌছলে তাদের একজন বলল-
أن عليه العنكبوت قبل ميلاد النبي صلى الله عليه وسلم فانصرفوا
অর্থাৎ- ‘হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মের পূর্ব থেকে এ গুহামুখে মাকড়শার জাল রয়েছে। অতঃপর তারা চলে গেল।’
ইবনু আউন (রহ.) বলেন-
قتل عمار وهو إبن احدى وتسعين سنة وكان اقدم في الميلاد من رسول الله صلى الله عليه وسلم
অর্থ- ‘হযরত আম্মার বিন ইয়াসির রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ৯১ বছর বয়সে শহীদ হন। তিনি জন্মের েেত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অগ্রজ ছিলেন।’
হযরত ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন-
وكان بين ميلاد عيسى والنبي عليه الصلاة والسلام خمس مائة سنة وتسع وستون سنة
অর্থাৎ- ‘আর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মের মাঝখানে ৫৬৯ বছর ব্যবধান ছিল।’
আল্লামা ইবনু হাজর আসক্বালানী আলাইহির রাহমাহ বলেন- فانه ولد بعد ميلاد النبي صلى الله عليه وسلم بمدة অর্থাৎ- ‘তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র জন্মের কিছুকাল পরে জন্ম গ্রহণ করেছেন।
উপরিউক্ত উদ্ধৃতি থেকে বুঝা গেল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র জন্ম বুঝানোর জন্য ‘মিলাদুনবী’ শব্দটির ব্যবহার সাহাবায়ে কিরামের যুগ থেকে অদ্যাবধি রয়েছে; এ যুগের নবসৃষ্ট কোন শব্দ নয়। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করে যে ‘মিলাদুন্নবী’ একটি ইদানিং সময়ের শব্দ, যা আদৌ সঠিক নয়। আবার কেউ কেউ ‘মিলাদ’ শব্দের অর্থ ‘জন্ম’ না নিয়ে অন্য অর্থ নেয়ার চেষ্টা করে, যা কোন অভিধান প্রণেতা উল্লেখ করেননি।

গ. ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’র পরিচয়
‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে বুঝায়-এ ধরাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র আগমনে আনন্দিত হওয়া এবং এ অদ্বিতীয় নিয়ামত পাবার কারণে সৎকাজ ও ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করা।

ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন
ক. কুরআন মাজীদের আলোকে
১.নিয়ামতের শোকরিয়া জ্ঞাপনের নির্দেশ
মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে তাঁর দেয়া নিয়ামতের শোকরিয়া জ্ঞাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন তিনি ইরশাদ করেছেন-
فاذكروني اذكركم واشكروا لي ولاتكفرون অর্থাৎ -‘সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, অকৃতজ্ঞ হয়ো না।
তাই আল্লাহর নিয়ামতের শোকরিয়া জ্ঞাপন করা প্রত্যেক মানুষের ওপর কর্তব্য। শোকরিয়া জ্ঞাপনের বিভিন্ন ধরণ রয়েছে, যা মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন।

নিয়ামতের শোকরিয়া জ্ঞাপনের পদ্ধতি
নিয়ামতের স্মরণ
নিয়ামতের স্মরণ করাও শোকরিয়া জ্ঞাপনের একটি মাধ্যম। নিয়ামতের স্মরণ করার মাধ্যমে আল্লাহর নিয়ামতের শোকরিয়া জ্ঞাপন করা যায়। তাই মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন-يا بني اسرائيل اذكروا نعمتي التي انعمت عليكم‘হে বণী ঈসরাঈল! আমার সেই অনুগ্রহকে স্মরণ কর যদ্দারা আমি তোমাদেরকে অনুগৃহীত করেছিলাম’। তিনি অন্যত্র ইরশাদ করেছেন-واذكروا نعمة الله عليكم অর্থাৎ- তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ কর।’

নিয়ামতের বর্ণনা দেয়া
নিয়ামতের শোকরিয়া জ্ঞাপনের আরেকটি মাধ্যম হল নিয়ামতের বর্ণনা দেয়া, অপরকে জানানো ইত্যাদি।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন- وأما بنعمة ربك فحدث অর্থাৎ -‘তুমি তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহের কথা জানিয়ে দাও।’
অত্র আয়াতে মহান রাব্বুল আলামীন মানুষদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন তারা তাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহের কথা বর্ণনা করে।

নিয়ামত চেনা
নিয়ামতকে নিয়ামত হিসেবে চেনাও শোকরিয়া জ্ঞাপনের একটি মাধ্যম। প্রত্যেক নিয়ামত হল আল্লাহ প্রদত্ত। আর এ নিয়ামতের মর্যাদাও চিনতে হবে এবং তদনুযায়ী শোকরিয়া জ্ঞাপন করতে হবে।
ইবাদত বন্দেগী
আল্লাহর নিয়ামতের শোকরিয়া জ্ঞাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল ইবাদত-বন্দেগী। নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ছাড়াও অন্যান্য নফল ইবাদত যেমন দান-খয়রাত, এতিম-গরীবদের খাওয়ানো ইত্যাদিও শোকরিয়া জ্ঞাপনের উত্তম মাধ্যম। ফরজ ইবাদত পালনের মাধ্যমে দায়মুক্তি পাওয়া যায়; কিন্তু অধিকতর কৃতজ্ঞ হবার জন্য নফল ইবাদতের বিকল্প নেই।

ঈদ উদযাপন করা
আল্লাহর নিয়ামত পাবার দিনকে ঈদের দিন হিসেবে গ্রহণ করার মাধ্যমেও নিয়ামতের শোকরিয়া করা যায়। যেমন হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম বলেছিলেন-
رَبَّنَا أَنْزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ تَكُوْنُ لَنَا عِيْدًا لَّاَوَّلِنَا وَاَخِرِنَا وَاَيَةً مِّنْكَ
অর্থ- হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য আসমান হতে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা প্রেরণ করুন; এটি আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য হবে ঈদ স্বরূপ এবং আপনার নিকটি হতে নিদর্শন।’
হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ তায়ালার নিকট ফরিয়াদ করেছিলেন যেন তিনি তাদের জন্য আসমান হতে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা অবতীর্ণ করেন। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম বলেছেন যে, খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা অবতীর্ণ হলে তারা সে দিনকে ঈদের দিন হিসেবে গ্রহণ করবেন। মহান রাব্বুল আলামীন তাদের ওপর সেই নিয়ামত রবিবারে অবতীর্ণ করেছিলেন বিধায় তারা আজও রবিবারকে ঈদের দিন হিসেবে মেনে থাকে এবং এদিনকে তারা ছুটির দিন হিসেবে পালন করে। কুরআন মাজীদের এ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, নিয়ামত পাবার দিনকে ঈদের দিন হিসেবে গ্রহণ করার েেত্র আল্লাহ তায়ালার স্বীকৃতি রয়েছে; কারণ তিনি হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের ঈদ উদযাপনের স্বীকৃতি দিয়ে তাঁর উক্তি পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন এবং কোন প্রকার নিষেধ করেননি। এটি অবৈধ হলে তিনি অবশ্যই তা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করতেন।
খৃষ্টানদের ওপর খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা রবিবারে অবতীর্ণ হবার কারণে সেদিনকে যদি ঈদের দিন হিসেবে উদযাপন করা যায়, তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র আগমণের দিনকে কেন ঈদের দিন হিসেবে মানা যাবে না? অথচ তিনিই হলেন সবচেয়ে বড় নিয়ামত সুতরাং ছোট নিয়ামতের শোকরিয়া স্বরূপ সেই নিয়ামত পাবার দিনকে ঈদের দিন হিসেবে উদযাপন করা বৈধ হলে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বড় নিয়ামত পাবার দিনকে ঈদের দিন হিসেবে মানা ও উদযাপন করা বৈধ।

খুশি উদযাপন করা
আল্লাহ তায়ালার নিয়ামতের শোকরিয়া জ্ঞাপনের একটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হল নিয়ামতের ওপর খুশি উদযাপন করা। তাই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন-
قل بفضل الله وبرحمته فبذلك فليفرحوا هو خير مما يجمعون
অর্থ- ‘(হে রাসুল) আপনি বলুন, (সবকিছু) আল্লাহর দয়া ও মেহেরবাণীতে। সুতরাং এরই প্রতি তারা (মুসলমান) যেন খুশি উদযাপন করে। তারা যা সঞ্চয় করছে তা থেকে এটিই শ্রেষ্ঠতর।’
এ আয়াতে মহান রাব্বুল আলামীন খুশি উদযাপনের দুটি উপকরণ সাব্যস্ত করেছেন। একটি হল (فضل) আর অপরটি হল (رحمة)। এতদুভয়ের মর্ম কী- এর ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত তাফসির বিশারদ আল্লামা মাহমূদ আলুসী , ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতী, ইমাম আবু হাইয়ান আনদালূসী আলাইহিমুর রাহমান স্ব-স্ব তাফসীর গ্রন্থে তাফসিরকারকদের শিরোমণি হযরত ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর সূত্রে বর্ণনা করেন যে, এখানে (فضل) দ্বারা জ্ঞান এবং (رحمة) দ্বারা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝানো উদ্দেশ্য।
আল্লামা ইবনু জাওযী (রহ.)বলেন-
ان فضل الله العلم ورحمته محمد صلى الله عليه وسلم رواه الضحاك অর্থাৎ- ‘নিশ্চয় আল্লাহর ‘ফদ্বল’ হল জ্ঞান আর ‘রহমত’ হল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যা ইমাম দাহ্হাক রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন।
আল্লামা তাবরিযী উল্লিখিত আয়াতের অর্থ করতে গিয়ে বলেন-
فافرحوا بفضل الله عليكم ورحمته لكم بإنزال هذا القرآن وإرسال محمد إليكم فانكم تحصلون بهما نعيما دائما مقيما هو خير لكم من هذه الدنيا الفانية
অর্থাৎ-‘তোমাদের প্রতি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করে এবং কুরআন অবতীর্ণ করে আল্লাহ তায়ালা তোমদের ওপর যে দয়া ও করুণা করেছেন, তাতে তোমরা খুশি উদযাপন কর। কেননা উভয়ের (ফদল ও রহমত) মাধ্যমে নিশ্চয় তোমরা চিরস্থায়ী নিয়ামত অর্জন করবে, যা এ নশ্বর পৃথিবী থেকে তোমাদের জন্য অধিকতর শ্রেয়।’
ইমাম বাক্বির রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রখ্যাত মুফাসসির হযরত ক্বাতাদাহ্, হযরত মুজাহিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা প্রমুখ থেকে বর্ণনা করেন যে (فضل الله) দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বুঝানো হয়েছে।
উল্লিখিত আয়াতে ‘রহমত’ দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা বুঝানো হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ করেছেন-
رحمة للعالمين وما أرسلناك إلا ‘আমি আপনাকে বিশ্বজগতের জন্য রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।’
প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা মাহমূদ আলূসী আলাইহির রাহমাহ প্রমুখের মতে ‘রহমত’ হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি নাম।
এ ছাড়াও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন বিশ্ববাসীর জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামত। এতে কারো দ্বিমত নেই। তাই আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-
ولقد من الله على المؤمنين إذ بعث فيهم رسولا من أنفسهم
অর্থাৎ- ‘আল্লাহ মুমিনদের ওপর অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের নিজেদের মধ্য থেকে তাদের নিকটি রাসূল প্রেরণ করেছেন।’
সুতরাং বুঝা গেল যে, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্ববাসীর জন্য বড় অনুগ্রহ ও নিয়ামত। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা এ বড় অনুগ্রহ তথা রাসূলুল্লাহকে পাবার ওপর খুশি উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। আর রাসূলুল্লাহকে পাবার দিন হল ‘মিলাদুন্নবী’ এবং ‘মিলাদুন্নবী’ কে কেন্দ্র করে খুশি উদযাপন করাই হল ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ যা পালন করার নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহ দিয়েছেন। দেওবন্দীদের গুরু মাওলভী আশরাফ আলী থানভী সাহেব বলেন যে, “উল্লিখিত আয়াতে ‘রহমত’ ও ‘ফদ্বল’ দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামাকে বুঝানো হয়েছে,
যার জন্মের ওপর আল্লাহ তায়ালা খুশি উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ তিনি সকল নিয়ামতের মূল। তাই তাঁর আগমনে যতই খুশি উদযাপন করা হোক না কেন তা কমই হবে।”
এ ছাড়াও উপরিউক্ত আয়াতের ‘রহমত’ শব্দ দ্বারা রাসূলুল্লাহকে খাস বা নির্দিষ্ট অর্থে বুঝানো না হলেও ‘আম’ বা ব্যাপক অর্থেও তাঁকে বুঝাতে কারো দ্বিমত থাকতে পারে না; কারণ তিনি সৃষ্টি জগতের প্রতি আল্লাহর বড় রহমত। আল্লাহর অন্যান্য নিয়ামতের মত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা যেহেতু একটি নিয়মত, সেহেতু তার আগমনের ওপর খুশি উদযাপন করা আল্লাহর নির্দেশ পালন মাত্র। আর রাসূলুল্লাহর জন্ম উপলে খুশি উদযাপন করার নামই হল ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’।
অতএব কুরআনের আয়াত থেকে প্রমাণিত হল যে রাসূলের জন্ম উপলে খুশি উদযাপন করা আল্লাহর নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। খুশি উদযাপনের েেত্র সকল বৈধ পন্থা গ্রহণ করা শরিয়ত সম্মত। তাই মুসলিমগণ একত্রিত হয়ে মানুষের প্রতি আল্লাহর বড় কৃপার কথা তথা রাসূলের আগমনের কথা স্মরণ করে, রাসুলের জীবন-বৃত্তান্ত বর্ণনা করে, ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে খানা-পিনা খাওয়ায় এবং দান-সদকা ইত্যাদি করার ব্যবস্থা করে। মোট কথা খুশি উদযাপনের বহিঃপ্রকাশ শরিয়ত সম্মত পন্থায় হলে কোন অসুবিধা নেই।

২. মহান আল্লাহ কর্তৃক মিলাদুন্নবী উদযাপন
পূর্বেই বলা হয়েছে যে মিলাদুন্নবী উদযাপন বলতে নবীর জন্মকে স্মরণ করা এবং তাঁর জীবন-বৃত্তান্ত বর্ণনা করা। মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে পঁচিশজন নবী রাসূলের মধ্যে হযরত আদম, হযরত মূসা, হযরত ইয়াহ্ইয়া, হযরত ঈসা ও হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম-বৃত্তান্ত বর্ণনা করেছেন। যেমন হযরত ইয়াহ্ইয়া আলাইহিমুস্ সালাম সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- وسلام عليه يوم ولد অর্থাৎ তার প্রতি শান্তি যেদিন তিনি (ইয়াহ্ইয়া আ.) জন্মলাভ করেন।’
এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা হযরত ইয়াহ্ইয়া আলাইহিস সালামের জন্মকালের কথা উল্লেখ করেছেন। আর এটার নাম ‘মিলাদুন্নবী’ বা নবীর জন্মকাল। তিনি পবিত্র কুরআনে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে ইরশাদ করেন-
لقد جاءكم رسول من أنفسكم عزيز عليه ما عنتم حريص عليكم بالمؤمنين رؤف رحيم
অর্থাৎ ‘অবশ্যই তোমাদের (আরবগণ) মধ্য থেকেই (বংশ থেকে) তোমাদের নিকট এসেছেন এক মহান রাসূল, তোমাদেরকে যা বিপন্ন করে তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক, তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, পরম দয়ালু।’
এ আয়াতে মহান আল্লাহ আরবদেরকে স্মরণ করে দিলেন যে তাদের নিকট তাদের বংশ থেকেই এক মহান রাসূল এসেছেন। এখানে আসার অর্থ হল জন্মগ্রহণ করা। এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্ম তথা ‘মিলাদুন্নবীর কথা উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়াও তিনি অসংখ্য আয়াতে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামরে আগমনের কথা উল্লেখ করেছেন। এভাবে তিনি তাঁর প্রেরিত নবী-রাসূলের জন্ম বৃত্তান্ত বর্ণনা করেছেন তথা ‘মিলাদুন্নবী’ উদযাপন করেছেন। তাই মুমিনগণ তাদের প্রতি প্রেরণের কথা স্মরণ করেন।

খ.হাদিছ শরিফের আলোকে
ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন করা হাদিছ শরিফ দ্বারাও প্রমাণিত হয়। রাসূলুল্লাহ নিজেও শোকরিয়া স্বরূপ এ ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করেছেন, ছাগল জবাই করে এবং রোযা রেখে। এ সম্পর্কে কয়েকটি হাদিছ নিম্নে উল্লেখ করা হল।
১.প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু বলেন-
قدم النبي المدينة فرأى اليهود تصوم يوم عاشوراء فقال: ما هذا؟ قالوا: هذا يوم صالح هذا يوم نجى الله بني اسرائيل من عدوهم فصيامه موسى قال فأنا أحق بموسى منكم فصيامه وأمر بصيامه
অর্থাৎ ‘নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা শরিফ আগমন করলেন এবং সেখানে ইয়াহুদিদেরকে আশুরার দিনে রোযা রাখতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন- এটা কিসের রোযা? তারা বলল, এটা উত্তম দিন, আর এ দিনেই আল্লাহ বনি ইসরাঈলকে তাদের শত্র“দের থেকে মুক্তি দিয়েছেন। তাই হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এ দিনে রোযা রেখেছিলেন। রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেন, তোমাদের চেয়ে মূসা আলাইহিস সালামের আমিই অধিকতর হক্বদার। অতঃপর তিনি স্বয়ং রোযা রাখলেন এবং তার উম্মতদের এ রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন।’
২.হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অন্য হাদিছে বর্ণনা করেন-
هذا اليوم الذي أظفر الله فيه موسى وبني اسرائيل على فرعون ونحن نصومه تعظيما له فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : نحن اولى بموسى منكم ثم امر بصومه
অর্থাৎ এ দিনেই আল্লাহ তায়ালা হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এবং বনি ইসরাঈলদেরকে ফিরআউনের ওপর বিজয় দান করেছেন। আমরা এ দিনের সম্মানার্থে রোযা রাখছি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-“আমরা তোমাদের চেয়ে মূসা আলাইহিস সালাম’র অধিকতর হক্বদার।” তারপর তিনি (মুমিনদেরকে)এ রোযা রাখার নির্দেশ দেন।’
উপরিউক্ত হাদিছ দু’টি থেকে যা বুঝা যায় –
এক. ১০ মুহররম তারিখে আল্লাহ তায়ালা হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এবং বনি ইসরাঈলকে ফিরয়াউন থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এ কারণে আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপনার্থে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম রোযা রেখেছেন। সুতরাং আমরা সবচেয়ে বড় নিয়ামত রাসূলুল্লাহকে পাবার দিনকে স্মরণ করে আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন করে মিলাদুন্নবি উদযাপন মাধ্যম।
দুই. ইয়াহুদিরা নিয়ামত পাবার দিনকে স্মরণ করে প্রতি বছর একই দিনে রোযা রাখতেন। এ কথা রাসূলুল্লাহ জেনেও নিষেধ করেননি যে, তোমরা তো অনেক বছর পূর্বে নিয়ামত পেয়েছ, তা এখন স্মরণ করে প্রতি বছর রোযা রাখার প্রয়োজন নেই; বরং নিয়ামত পাবার দিনকে স্মরণ করার সমর্থন জানিয়েছেন।
তিন. মূসা আলাইহিস সালাম’র মুক্তির দিনকে স্মরণ করে রাসূলুল্লাহ স্বয়ং নিজেও রোযা রেখেছেন এবং তাঁর উম্মতদেরকে এ রোযা রাখার নির্দেশ দেন। সুতরাং নিয়ামতের দিনকে সৎকাজের মাধ্যমে স্মরণ করা রাসূলুল্লাহকে পাবার দিনকে স্মরণ করে ঈদে মিলাদুন্নবি উদযাপন করা স্বয়ং রাসুলুল্লাহর সুন্নাত।
বিশ্বখ্যাত ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতী আলাইহির রাহমাহ বলেন-
وقد سئل شيخ الإسلام حافظ العصر ابو الفضل ابن حجر عن عمل المولد فأجاب بما نصه : قال وقد ظهر لي تخريجها على أصل ثابت وهو ثبت في الصحيحين من – ان النبي صلى الله عليه وسلم قدم المدينة فوجد اليهود يصومون يوم عاشوراء فسالهم فقالوا: هو يوم أغرق الله فيه فرعون ونجى موسى فنحن نصومه شكرا لله تعالى فيستفاد منه فعل الشكر لله تعالى على ما من به في يوم معين من اسداء نعمة أو دفع نقمة ويعاد ذلك في نظير ذلك اليوم من كل سنة والشكر لله تعالى يحصل العبادات كالسجود والصيام و الصدقة والتلاوة وأي نعمة أعظم من النعمة بيروز هذا النبي صلى الله عليه وسلم الذي هو بني الرحمة في ذلك اليوم له
অর্থাৎ ‘শাইখুল ইসলাম, হাফিযুল আছর, আবুল ফদল ইবনু হাজর আসকালানীকে ঈদে মিলাদুন্নবি উদযাপনের ভিত্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বলেন, ঈদে মিলাদুন্নবি উদযাপনের মূল ভিত্তি আমার নিকট সুস্পষ্ট হয়েছে, যা সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম শরিফে রয়েছে। সেই ভিত্তিটা হল- নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা শরিফ আগমন করলেন। তিনি সেখানে ইয়াহুদিদেরকে আশুরার দিনে রোযা রাখতে দেখে তাদেরকে এ রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। অতঃপর তারা বলল, এ দিনে আল্লাহ তায়ালা ফিরয়াউনকে ডুবিয়ে মেরেছেন আর হযরত মূসা আলাইহিস সালাম কে মুক্তি দিয়েছেন। এ কারণে আমরা আল্লাহ তায়ালার শোকরিয়া জ্ঞাপনার্থে রোযা রাখছি।’
এ হাদিছ শরিফ থেকে প্রমাণিত হয় যে, নির্দিষ্ট দিনে আল্লাহর রহমত পাবার কারণে বা কোন বিপদ থেকে মুক্তি লাভের পর আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন করা বৈধ। প্রতি বছর সেই একই দিনে আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন করা যাবে আর আল্লাহ তায়ালার শোকরিয়া জ্ঞাপন বিভিন্ন রকম ইবাদতের মাধ্যমে করা যায় যেমন নামায, রোযা, সদকা এবং কুরআন তিলাওয়াত। আমাদের জন্য যেদিন নবি করিম রাহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র আগমণ করেছেন সেদিনের চেয়ে বড় নিয়ামত আর কী হতে পারে?
উল্লিখিত বর্ণনা থেকে বুঝা লে যে, প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ ইমাম ইবনু হাজর আসকালানী আলাইহির রাহমাহ আশুরার হাদিছকে ‘ঈদে মিলাদুন্নবি’ উদযাপনের গ্রহণযোগ্য ভিত্তি বলেছেন এবং তা প্রতি বছর পালনের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। সুতরাং ঈদে মিলাদুন্নবি’ উদযাপন করা শরিয়ত সম্মত একটি সৎকাজ।
২. হযরত আবু মূসা আশয়ারী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন-
كان أهل خيبر يصومون يوم عاشوراء يتخذونه عيدا ويلبسون نسائهم فيه حليهم وشارتهم فقال رسول الله صلى عليه وسلم فصوموه انتم
অর্থাৎ ‘খায়বরবাসী আশুরার দিনে রোযা রাখত। তারা সেদিনকে ঈদ উদযাপনের দিন হিসেবে গ্রহণ করত, তারা তাদের স্ত্রীদেরকে সেদিন অলংকার এবং সুন্দর পোশাক পরাত। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (মুমিনদের) বললেন! তোমরাও সেদিন রোযা রাখ।’
উল্লিখিত হাদিছ থেকে বুঝা যায় যে, আশুরার দিনকে ইয়াহুদিরা ঈদের দিন হিসেবে পালন করত। কারণ সেদিন হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ফিয়াউন থেকে মুক্তি লাভ করেছেন। আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপনার্থে তারা প্রতি বছর সেদিনকে স্মরণ করে রোযা রেখে ঈদ উদযাপন করে। এসব দেখে রাসূলূল্লাহ মুসলিমদেরকে নিষেধ করেননি যে, তোমরা নিয়ামতের শোকরিয়া জ্ঞাপনার্থে ঈদ উদযাপন করো না; বরং ইরশাদ করেছেন ‘তোমরা ও রোযা রাখ।’ এ থেকে বুঝা যায় যে, যেকোন নিয়ামতের শোরিয়া জ্ঞাপনার্থে ঈদ উদযাপন করা বৈধ । তাহলে সবচেয়ে বড় নিয়ামত রাসূলুল্লাহকে মুমিনরা পেয়ে সেদিনকে স্মরণ করে আল্লাহ তায়ালার শোকরিয় জ্ঞপনার্থে সৎ কাজের মাধ্যমে ‘ঈদে মিলাদুন্নবি’ উদযাপন করতে বাধা থাকতে পারে না।
৩. হযরত আবু ক্বাতাদাহ আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন-
إن رسول الله صلى الله عليه وسلم سئل عن صوم يوم الاثنين قال: ذاك يوم ولدت فيه ويوم بعثت او أنزل على فيه
অর্থাৎ ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম কে সোমবারে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞে করা হলে, তিনি বলেন, সেদিন আমার জন্ম হয়েছে, আমি নবি হিসেবে প্রেরিত হয়েছি এবং আমার ওপর কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে।’
উল্লিখিত হাদিছ শরিফ থেকে বুঝা গেল যে, রাসূলুল্লাহ সোমবারে রোযা রাখতেন। সাহাবায়ে কিরাম এর কারণ জানতে চাইলে তিনি ইরশাদ করেন যে, সেদিন তার জন্মদিন ও নবুয়ত প্রকাশের দিন। তার ওপর আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ করে তিনি প্রতি সোমবার আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপনার্থে রোযা রাখতেন।
তিনি জন্মদিনে আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন করতেন। সুতরাং আল্লাহর নিয়ামতের শোকরিয়া জ্ঞাপনার্থে ‘ঈদে মিলাদুন্নবি’ উদযাপন করা রাসূলুল্লাহর সুন্নাত।
৪. হযরত আউস বিন আউস রাদ্বিয়অল্লাহু তায়অলা আনহু বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- أن من أفضل اياكم يوم الجمعة فيه خلق آدم অর্থাৎ ‘তোমাদের দিনসমূহের মধ্যে শুক্রবার শ্রেষ্ঠতর দিন। এ দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে।’
হযরত আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেন-أن يوم الجمعة يوم عيد অর্থাৎ ‘নিশ্চয় শুক্রবার হল ঈদের দিন।’
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেন-
أن هذا يوم عيد جعله الله للمسلمين فمن جاء إلى الجمعة فليغسل وإن كان طيب فليمس منه وعليكم بالسواك
অর্থাৎ ‘নিশ্চয় এ দিন ( শুক্রবার) ঈদের দিন, যাকে আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদের জন্য নির্ধারণ করেছেন।’
যে ব্যক্তি জুমার নামায পড়তে আসে, সে যেন গোসল করে আসে আর তার কাছে যদি সুগন্ধি থাকে, তাহলে সে যেন তা থেকে কিছু শরীরে লাগিয়ে আসে। তোমাদের ওপর মিসওয়াক করা আবশ্যক।’
উল্লিখিত হাদিছসমূহ থেকে বুঝা গেল যে, শুক্রবার হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার কারণে সেদিনকে উত্তম দিন এবং ঈদের দিন বলা হয়েছে। সুতরাং যেদিন সৃষ্টি জগতের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ নবীর আগমন হয়েছে, সেদিনকে কেন ঈদের দিন হিসেবে মানা যাবে না?
৫. হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন-
إن النبي صلى الله عليه وسلم عق عن نفسه بعد النبوة অর্থাৎ নবুয়ত প্রকাশের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের আক্বীক্বাহ করেছেন। ’
অন্য বর্ণনায় হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন- ان النبي صلى الله عليه وسلم عق عن نفسه بعد ما بعث نبيا অর্থাৎ ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবী হিসেবে প্রকাশ পাবার পর নিজের আক্বীকাহ করেন।’
এ হাদিছের ব্যাখ্যায় বিশ্ববিখ্যাত ইমাম জালাল উদ্দিন সূয়ূতী (রাহ.) বলেন-
ان جده عبد المطلب عق عنه في سابع ولادته والعقيقة لاتعاد مرة ثانية فيحمل ذلك على أن الذي فعله النبي صلى الله عليه وسلم إظهارا للشكر على إيجاد الله تعالى رحمة للعالمين وتشريفا لامته كما كان يصلي على نفسه لذلك فيستحب لنا ايضا إظهار الشكر بمولده باجتماع الاخوان وإطعام الطعام ونحو ذلك من وجوه القربات وإظهار المسرات
অর্থাৎ ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র দাদা রাসুল্ল্লুাহ’র জন্মের সপ্তম দিনে তার আক্বীক্বাহ করেছেন। আর আক্বিক্বাহ্ দু’বার হয় না। সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয়বার আকীকাহ তথা ছাগল জবাই করেছেন আল্লাহ তায়ালার শোকরিয়া জ্ঞাপনার্থে। কেননা, আল্লাহ তায়ালা
তাকে ‘রাহমাতুল্লিল আলামীন’ এবং উম্মতের কাছে সম্মানিত করে সৃষ্টি করেছেন। এভাবে রাসূলুল্লাহ আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপনার্থে নিজের ওপর দরুদ শরিফ পাঠ করতেন। অতএব রাসূলুল্লাহর জন্ম উপলে মুসলিম ভাইদের একত্র হবার মাধ্যমে, খানা খাওয়ানো, অন্যান্য ইবাদত পালন এবং ঈদ উদযাপনের মাধ্যমে আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন করা আমাদের জন্যও মুস্তাহাব।’
উপরিউক্ত বর্ণনা থেকে বুঝা গেল যে, রাসূলুল্লাহর জন্ম উপলে ‘ঈদে মিলাদুন্নবি’ উদযাপন করা স্বয়ং রাসুলুল্লাহর সুন্নত আর আমরা এ সুন্নাতের উপরই আমল করি। এ ব্যাখ্যা বর্তমান সময়ের নয়; বরং শত শত বছর পূর্বের যুগ শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ, মুফাসসির, ফিকাহবিদ ও ইতিহাসবিদের।
৬. সহীহ বুখারী শরিফে রয়েছে-
فلما مات ابو لهب أريه بعض أهله شر حاله قال له : ماذا لقيت قال ابو لهب لم الق بعدكم غير أني سقيت في هذه بعتاقي ثوبية
অর্থাৎ ‘আবু লাহাবের মৃত্যুর পর তার পরিবারের কাউকে (হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) স্বপ্ন দেখানো হল যে, সে খারাপ অবস্থায় আছে। স্বপ্নদ্রষ্টা তাকে বলল, তোমার কী অবস্থা? আবু লাহাব বলল, আমি অত্যন্ত আযাবের মধ্যে আছি; তবে (রাসূলুল্লাহর জন্মের ওপর খুশি হয়ে) ছুয়াইবাহকে মুক্তি দেয়ার কারণে (সেদিন তথা সোমবার) আমাকে পান করানো হয়।’
ইমাম ইবনু হাজর আসকালানী আলাইহির রাহমাহ ইমাম সুহাইলী আলাইহির রাহমাহ থেকে বর্ণনা করেন-
إن العباس : قال لما مات ابو لهب رأيته في منامي بعد حول في شر حال فقال ما لقيت بعدكم راحة إلا أن العذاب يخفف عني كل يوم اثنين قال ذلك أن النبي صلى الله عليه وسلم ولد يوم الاثنين وكانت ثويبة بشرت ابا لهب بمولده فاعتقها
অর্থাৎ ‘হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখেছি যে, সে খুব খারাপ অবস্থায় আছে। অতঃপর সে বলল; তোমাদের ছেড়ে আসার পর আমি কোন শান্তি পাইনি; তবে প্রতি সোমবার আমার শাস্তি কিছুটা কমানো
হয়। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবারে জন্ম গ্রহণ করেছেন আর আবু লাহাবের দাসী ছুয়াইবা রাসূলুল্লাহর জন্ম গ্রহণের সুসংবাদ আবু লাহাবকে দিলে সে তাকে (আনন্দিত হয়ে) স্বাধীন করে দিয়েছে।’
উল্লিখিত হাদিছ থেকে কয়েকটি বিষয় বুঝা যায়-
এক. আবু লাহাব হল প্রথম সারির কাফির, যার নিন্দায় আল্লাহ তায়ালা সূরা লাহাব অবতীর্ণ করেছেন। এতদসত্ত্বেও সে রাসূলুল্লাহর জন্মের ওপর ভাতিজা হিসেবে খুশি হয়ে তার দাসী ছুয়াইবাকে স্বাধীন করে দেয়ার কারণে কবরে তার শাস্তি প্রতি সোমবার কমানো হয়। ভাতিজা হিসেবে সে রাসূলুল্লাহর জন্মের ওপর খুশি হবার কারণে যদি তার শাস্তি কমানো হয়, তাহলে মুমিনরা যদি আল্লাহর রাসূল যিনি সবচেয়ে বড় নিয়ামত তাঁর ওপর খুশি হয়, তাহলে উত্তম প্রতিদানের পরিমাণ কী হবে, তা সহজেই অনুমেয়।
দুই. কাফেরদের কোন সৎকাজের প্রতিদান পরকালে দেয়া হবে না। কারণ তাদের ঈমান নেই। এরপরও আবু লাহাবকে সৎকাজের প্রতিদান কিভাবে দেয়া হল তার উত্তরে ইমাম কিরমানী বলেন-
العمل الصالح والخير الذي يتعلق بالرسول صلى الله عليه وسلم مخصوصا في ذلك كما أن ابا طالب ايضا ينتفع بتخفيف العذاب
অর্থ- ‘কাফেরদের সৎকাজ যেগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সাথে সম্পৃক্ত, সেগুলোর প্রতিদান দেয়া হয় যেমন আবু তালিব (রাসূলুল্লাহর খেদমতের কারণে) কম শাস্তি ভোগের মাধ্যমে উপকৃত হয়।’
একজন কাফেরের যদি এ প্রতিদান হয়, তাহলে একজন মুমিনকে কী প্রতিদান দেয়া হবে তা সহজেই বুঝা যায়।
তিন. রাসূলুল্লাহর জন্মের ওপর খুশি হয়েছে আবু লাহাব। এ খুশি হওয়াটা অন্তরের বিষয়, যা প্রকাশের জন্য সে তার দাসী ছুয়াইবাকে স্বাধীন করে দিয়েছে। মুমিনরাও রাসূলুল্লাহর জন্মের ওপর খুশি হয়ে বিভিন্ন সৎকাজ যেমন কুরআন তিলাওয়াত, আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপনার্থে রাসূলুল্লাহর জীবন বৃত্তান্ত বর্ণনা, খানাপিনা খাওয়ানো, দান-সদকাহ প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ করেন।
চার. যে কাজের মাধ্যমে পরকালে উত্তম প্রতিদান পাওয়া যায়, সে কাজ বিদয়াতে সাইয়্যিাহ বা মন্দ বিদয়াত কিংবা অবৈধ হতে পারে না; কারণ অবৈধ কাজে সওয়াব কিংবা উত্তম প্রতিদান নেই। একজন প্রথম সারির কাফের ‘ঈদে মিলাদুন্নবি’ উদযাপন করে যেহেতু (পরকালে) উত্তম প্রতিদান পাচ্ছে, সেহেতু ‘ঈদে মিলাদুন্নবি’ উদযাপন নিঃসন্দেহে একটি উত্তম ও সওয়াবের কাজ।
এ হাদিছের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনুয জাযরী আলাইহির রাহমাহ বলেন-
فاذا كان ابو لهب الكافر الذي نزل القرآن بذمه جوزى في النار بفرحة ليلة مولد النبي صلى الله عليه وسلم فما حال المسلم الموحد م أمة محمد صلى الله عليه وسلم بنشره مولده وبذل ما تصل اليه قدرته في محبته صلى الله عليه وسلم لعمري إنما يكون جزاء من الله الكريم أن يدخله بفضله جنات النعيم
অর্থাৎ ‘কাফের আবু লাহাব যার নিন্দায় কুরআনের একটি সূরা (সুরা লাহাব) অবতীর্ন হয়েছে সে যদি ‘ঈদে মিলাদুন্নবি’ উদযাপনের কারণে কম শাস্তি ভোগ করে, তাহলে উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্যে সে মুসলিম ব্যক্তির কী প্রতিদান হতে পারে যে ‘ঈদে মিলাদুন্নবি’ উদযাপন করে এবং এ উপলে রাসূলূল্লাহর প্রেমে তার সামর্থ অনুযায়ী খরচ করে? আমার জীবনের কসম করে বলছি- দয়াময় আল্লাহর প থেকে তার প্রতিদান হল, আল্লাহ তাকে ‘জান্নাতুন নয়ীমে’ প্রবেশ করাবেন।’
উপরিউক্ত হাদিছ সম্পর্কে প্রখ্যাত মুহাদ্দিছ শাইখ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী আলাইহির রাহমাহ বলেন-
“এ হাদিছ ‘ঈদে মিলাদুন্নবি’ উদযাপনকারী এবং এর জন্য সম্পদ ব্যায়কারীদের প্রমাণ। আবু লাহাব যার নিন্দায় কুরআনের একটি সূরা (লাহাব) অবতীর্ণ হয়েছে সে যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র জন্মের ওপর খুশি হয়ে তার দাসী (ছুয়াইবা) কে স্বাধীন করে দেয়ার কারণে শাস্তি কম ভোগ করে, তাহলে সে মুসলিমের কী অবস্থা হবে যে, রাসূলুল্লাহর ভালবাসা নিয়ে ‘ঈদে মিলাদুন্নবি’ উদযাপন করে এবং ঈদে মিলাদুন্নবি উদযাপনে সম্পদ ব্যায় করে? তবে মন্দ বিদয়াত যেমন নাচ, গান, হারাম বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা উচিত; কেননা এগুলোর কারণে (মিলাদুন্নবি উদযাপনের) বরকত পাওয়া যাবে না।”

আল্লামা আব্দুল হাই লাকনভী বলেন-
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র জন্মের ওপর খুশি হবার কারণে আবু লাহাবের মত কাফেরের যখন শাস্তি কমে গেল, তাহলে রাসূলূল্লাহর উম্মতের মধ্যে যে রাসূলুল্লাহর জন্মের ওপর খুশি উদযাপন করবে এবং তার প্রেমে ঈদে মিলাদুন্নবি উদযাপনে সামর্থ অনুযায়ী খরচ করবে সে কেন সুউচ্চ মর্যদা পাবে না?’
উপরিউক্ত হাদিছসমূহ থেকে প্রমাণিত হল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র জন্ম উপলে ‘ঈদে মিলাদুন্নবি’ উদযাপন করা শুধু বৈধ নয়; বরং অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। এটি স্বয়ং রাসূলুল্লাহর সুন্নাত। কারণ তিনি নিজেও আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপনার্থে ছাগল জবাই করে ‘ঈদে মিলাদুন্নবি’ উদযাপন করেছেন এবং প্রতি সোমবার রোযা রাখতেন। (চলবে)

লেখক: প্রভাষক, উলূমুল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ,
জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া, চট্টগ্রাম।

About sunniaaqida

sunniaaqida

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান